Header Ads

শিখন,

কাল পুস্পিতা চিঠি দিল। ওর চিঠিতে জানলাম দেড় বছর বাড়ী যাচ্চিস না। কেন, তা জানতে চাচ্ছি না, শুধু এটুকু বলছি তোকে, সম্পর্ক করলেই হয় না শিখু সেই সম্পর্কটাকে মনের গহীনে লালন করতে হয়, সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হয়। আর তুই কী করছিস ভাই? তোকে তো আমি অনেক বুদ্ধীমান মনে করতাম। দেখ জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে সব আল্লাহর ইচ্ছা। আমি মানি তোমার খালতো বোন নীলা অনেক ভালবাসতো তোমায় কিন্তু আল্লাহ ওর সাথে হয়ত তোমার বিয়েটা লিখে নাই। তাই বলে পুস্পিতাকে কেন অবহেলা করছো? অনেকেই বলে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, হয়ত তুমি সময়ের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে হয়ত নীলাকে কাছের রাখার কোন চেষ্টাই কর নি। বাদ দাও এসব পুরান কথা। এগুলো যত কম বলা যায় ততই ভালো। আসল কথা বলি যে, কারণে তোমাকে চিঠি লেখা। সমানের মাসে আমি আর তোমার ভাই বাড়ী যাব। তুমিও সাথে যাবে। মানা করলে কান ধরে নিয়ে যাব। ভেবো না, ভাবী এখন বুড়ী হয়েছে আগের মত কী আর শাসন করতে পারবে। হয়ত পারব না, কিন্তু চেষ্টা করতে দোষ কী বলো।
.
জানো শিখু বাড়ীর কথা মনে পড়লেই মনে পড়ে ১০ বছরের একটা মেয়ে কতগুলো পুতুল নিয়ে নিজেও পুতুলের মতো সেজে নতুন বাড়ীতে আসার কথা। সেদিন তোমাদের বাসায় এসেই গগনজুড়ো কান্না শুরু করেছিলাম। তোমাদের বাড়ীর সবাই কত চেষ্টা করছিলো কান্না থামাতে সবাই ব্যর্থ হয়ে যখন ফিরে যাচ্ছিল ঠিক তখনই তোমার মা একথালা ভাত নিয়ে এসে জোর করে খাইয়ে দিল। কতই না আদর করেছেন মা আমাকে। তিনি যে আমার শ্বাশুড়ী ছিলেন, না বললে কেউ বুঝতোই না। তোমার মনে পড়ে কী, তোমার ভাই যেদিন এন্ট্রাস পরীক্ষা দিয়ে বাড়ী ফিরল। মনে হয় পরশুর কথা। আমার পুতুল আনে নি বলে উনাকে আমি পুকুরে ফেলে দিয়েছিলাম। মা কিন্তু আমাকে কিছুই বলে নি। বরং আকাশকে অনেক বকেছিল। কেন পুতুল আনে নি। আমি যতদিন বাড়ী ছিলাম এক বেলায়ও নিজের হাতে খেয়েছি কিনা মনে পড়ে না। আমাকে মেয়ের মতই বড় করেছেন। এমন শ্বাশুড়ী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। মা না থাকলে হয়ত তোমার এই স্মার্ট ভাই আমাকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতো। আচ্ছা শিখু, তোমার কি মনে পরে শীতকালে আমরা সবাই মিলে রাতের বেলা শাবু কাকার খেজুরের রস, জহরুল কাকার মুরগী, পলক মামার মাছ চুরি করে চরুইবাতি খেলতাম। কিন্তু তারা কেউই আমাদের নামে বিচার দিতো বরং তারা বলতেন বাচ্চা মানুষ দুষ্টামী না করলে কখন করবে। কত আনন্দেই না কাটছিল দিনগুলো।
.
যখন শান্তর বয়স দুই তখন কাকারা, ফুফারা তাদের মাছ, খেজুরের রস বাসায় দিয়ে যেতো আর বলত বউ মানুষ এখন আর পড়ায় পাড়ায় দৌড়াতে হবে না। তখন তোমার ভাতিজার উপর আমার অনেক রাগ ছিল। কিন্তু কখন যে শান্তকে আমি আমার অস্তিত ভাবতে শুরু করলাম মনেই পড়ছে না। মাঝে মাঝে তোমার ভাই আর আমি আমাদের ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করি তখন মনে হয় কিভাবে এতগুলো সুন্দরমুহূর্ত এত তারাতারি চলে গেলো, না গেলেও তো পারতো। আকাশকে স্বামী হিসেবে খুবই পচা কিন্তু বাবা হিসেবে অনেকটাই কেয়ারিং। জানো শান্তকে নিয়ে যখন আকাশ কথা বলে আমি মন দিয়ে শুনি কারণ সেগুলো তো ভুলেই গেছি। ভুলব না কেন বলো শিখু। শান্ত যখন আসে আমার তখন ১২ বছর। আমি নিজেই তো বাচ্চা মানুষ। কী হলো গাল ভুলালে মনে হচ্ছে, কী তোমার ভাইকে পচা স্বামী বলাতে? গাল ফুলিয়ো না। আকাশ বাজারে গেলেই পচা মাছ, বাসি শাক- সবজি নিয়ে আসে। দোকানীরা মনে হয় ওর জন্যই বসে থাকে তাদের দামী তরকারি নিয়ে। আচ্ছা শোন তিমুর কথা তোমার মনে আছে। ওকেও নিয়ে নিয়ো বাড়ীতে যাবার সময়। ও তানিয়া আপার সাথে দেখা করতে চেয়েছিল।
.
আমি আর তোমার ভাই কোন মতে বেঁচে আছি। দোয়া করো। সাক্ষাতে কথা হবে।
.
তোমার ভাবি/azom

No comments