প্রতিবছর ২৮ নভেম্বর আসে।
প্রতিবছর ২৮ নভেম্বর আসে। সেলিনা আখতার যান তাঁর ছেলের কবরে। বয়স বাড়ে, তাঁর চশমার পাওয়ার বাড়ে, চুলে আরও বেশি পাক ধরে এবং তাঁর চোখে দৃশ্যপট ঝাপসা থেকে ঝাপসাতর হতে থাকে। ডা. মিলনের হত্যাকারীরা বেকসুর খালাস পায়, এরশাদকে সঙ্গে পাওয়ার জন্য দুই দল কে কত বেশি ভালোবাসা দেবে তারই প্রতিযোগিতায় নামে, প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে জোট বাঁধে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিদিন একটু একটু করে ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়, যেমন আকাশে বাড়ে ধুলোর আস্তর, বাতাসে বাড়ে সিসা, নদী থিকথিক করে দূষিত বর্জ্য,ে দিন থেকে দিন পরিস্থিতি খারাপ হয়, গণতান্ত্রিক নেতা-নেত্রী দিন দিন অগণতান্ত্রিক হয়ে ওঠেন, খুন-খারাবি-চাঁদাবাজির সীমা থাকে না, খারাপ লোক নেতা হয় এবং আগে খারাপ লোকেরা মধুর ভাষণ দিত, এখন খারাপ লোকেরা অশ্লীল ও ভয়ংকর ভাষণ দেন, তাদের বাণীকেও মনে হয় ডাস্টবিন উপচে গলগল করে বেরিয়ে আসা বর্জ্য।
ডা. মিলনের খুব প্রিয় ছিল নাজিম হিকমতের লেখা জেলখানার চিঠি।
সেলিনা পারভীন ডাকেন কবিতাকে, ‘বউমা।’
‘জি মা।’
‘তোমার মনে আছে, মিলনের খুব প্রিয় কবিতা ছিল “জেলখানার চিঠি”।’
‘জি মা।’
‘বইটা একটু খুঁজে বের করতে পারবা?’
‘খুঁজে দেখি, মা।’
কবিতা ডা. মিলনের সংগ্রহ করা বইয়ের র্যাকের কাছে যান। বইটা পাওয়া যায়। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অনুবাদে নাজিম হিকমতের কবিতা।
তিনি বইটা তার শাশুড়ির হাতে দেন।
বইয়ের ভেতরে পাতায় মিলনের নিজের হাতে লেখা নাম। বইটা বোধ হয় সে কবিতাকে উপহার দিয়েছিল।
সেলিনা পারভীন আঁচল দিয়ে মোছেন সেই পাতাগুলো।
ডা. মিলনের খুব প্রিয় ছিল নাজিম হিকমতের লেখা জেলখানার চিঠি।
সেলিনা পারভীন ডাকেন কবিতাকে, ‘বউমা।’
‘জি মা।’
‘তোমার মনে আছে, মিলনের খুব প্রিয় কবিতা ছিল “জেলখানার চিঠি”।’
‘জি মা।’
‘বইটা একটু খুঁজে বের করতে পারবা?’
‘খুঁজে দেখি, মা।’
কবিতা ডা. মিলনের সংগ্রহ করা বইয়ের র্যাকের কাছে যান। বইটা পাওয়া যায়। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অনুবাদে নাজিম হিকমতের কবিতা।
তিনি বইটা তার শাশুড়ির হাতে দেন।
বইয়ের ভেতরে পাতায় মিলনের নিজের হাতে লেখা নাম। বইটা বোধ হয় সে কবিতাকে উপহার দিয়েছিল।
সেলিনা পারভীন আঁচল দিয়ে মোছেন সেই পাতাগুলো।
পাতা ওল্টান। পড়েন। বলেন, ‘আজকাল চোখে দেখতে অসুবিধা হয়।’
কবিতা বলেন, ‘দিন, মা। আমি পড়ে শোনাচ্ছি...’
কবিতা বলেন, ‘দিন, মা। আমি পড়ে শোনাচ্ছি...’
প্রিয়তমা আমার,
তোমার শেষ চিঠিতে
তুমি লিখেছ:
মাথা আমার ব্যথায় টনটন করছে,
দিশেহারা আমার হƒদয়।
তুমি লিখেছ:
যদি ওরা তোমাকে ফাঁসি দেয়
তোমাকে যদি হারাই,
আমি বাঁচব না।
তোমার শেষ চিঠিতে
তুমি লিখেছ:
মাথা আমার ব্যথায় টনটন করছে,
দিশেহারা আমার হƒদয়।
তুমি লিখেছ:
যদি ওরা তোমাকে ফাঁসি দেয়
তোমাকে যদি হারাই,
আমি বাঁচব না।
তুমি বেঁচে থাকবে প্রিয়তমা বধূ আমার
আমার স্মৃতি কালো ধোঁয়ার মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে
তুমি বেঁচে থাকবে, আমার হƒদয়ের রক্তকেশী ভগিনী,
বিংশ শতাব্দীতে,
মানুষের শোকের আয়ু
বড়জোর এক বছর।
আমার স্মৃতি কালো ধোঁয়ার মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে
তুমি বেঁচে থাকবে, আমার হƒদয়ের রক্তকেশী ভগিনী,
বিংশ শতাব্দীতে,
মানুষের শোকের আয়ু
বড়জোর এক বছর।
FROM বিক্ষোভের দিনগুলিতে প্রেম (প্রথমা)
আনিসুল হকের ওয়াল থেকে নেয়া।

Post a Comment