জীবনের প্রথম প্রেমের চিঠি পেয়ে আজ ভূলের জন্য অনুতপ্ত
জীবনের প্রথম প্রেমের চিঠি পেয়ে আজ ভূলের জন্য অনুতপ্ত
#######################
অনন্যা চাকমা
ছোটবেলায় প্রেম করার বিষয়টি খুব ভয় পেতাম।অতটা বুঝতাম না। প্রেম না করলেও প্রথম প্রেমের চিঠি পাওয়ার কথা মনে আছে তখন আমি রামগড় সরকারি হাইস্কুলে ক্লাস নাইনে সবে মাত্র উত্তীর্ণ হয়েছি। স্কুলে আসা-যাওয়া পথে অরুন জ্যোতি নামের একটি ছেলে আমাকে অনুসরণ করত। স্কুল থেকে বাড়িতে ফেরার পথে প্রায় সময় ছেলেটি তার বন্ধুদের সঙ্গে মটর সাইকেলে করে আমার বাড়ি পর্যন্ত আসত। যদিওবা আমাকে কিছুই বলতো না। কোন কারণে চোখাচোখি হলো হাঁসি দেওয়া চেষ্টা করতো। ছেলেটি সুদর্শন ভাল পরিবারের সন্তান তাদের বাবা-মা সরকারী চাকরী করে বেশ সুনাম তাদের গ্রামের মানুষেরা তাদের প্রসংশায় পঞ্চমুখ। তাঁর সাথে নামের প্রথম অক্ষরটি মিল আছে বলেই, মাঝে মাঝে আমার বান্ধবীরা আমাকে অরুনী বলে খোঁচা দিতেন। আমার এইসব একদম বেশ পছন্দ নয়, মাঝে মাঝে রেগে যেতাম,একদিন আমার খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী "মনিকা" ছেলেটি একটি কাগজ আমার হাতে ধরিয়ে দিল।খুলে পড়ে দেখলাম করুন জ্যোতি প্রেমের নিবেদন, আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না, আমি ভয়ে অস্থির।স্কুলে পৌঁছা মাত্রই প্রধান শিক্ষকের কাগজটি জমা দিলাম। এই নিয়ে তুমুল কান্ড! সারাদিন স্কুলে কান্না করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত স্কুল থেকে বিষয়টি পরিবারের উভয়কে জানানো হয়েছে।বাবা ছুটির পর স্কুল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসলেন। একদিন পর ছেলেটির মাবাবাসহ আমাদের পরিবারের তাঁর ছেলের জন্য মাফ চাইতে আসলেন। সত্যিই তাদের ছেলেটি মা-বাবা অত্যন্ত বিনয়ী মিষ্টি ভাষি ধর্মীক পরায়ন।তাঁরা আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন, অভয়বাণী দিলেন,ভাল করে লেখাপড়া শিখে জ্ঞানী মানুষ হতে আশীর্বাদ করলেন। এই পর ছেলেটি আমার বাড়ির ধারে কাছেও যাইনি, শুধু মাত্র স্কুলে আসা যাওয়া পথে দেখতাম শিমুল গাছের তলায় বসে উদাসীন হয়ে আকাশে দিকে তাকিয়ে থাকতেন। কোনদিন আমার দিকে চোখ তুলেও থাকায় নি।আজ কোন দিন দেখা হয়নি, আমার থেকে শতশত মাইল দূরে পৃথিবীর শেষ সীমান্তে রানওয়ে ইউনিভার্সিটিতে গভীর লেখা পড়ায় মনোযোগ সহকারে ব্যস্ত হয়ে আছেন। আমি আজ ছোট নয় নয় বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আদিবাসী ছাত্রী। আমার বিবেকবোধ সদাজাগ্রত, আমি আপনাকে অপমান করার জন্য খুবই লজ্জিত, অনুতপ্ত ও দুঃখিত। মানুষ ভূল করে ভূল স্বীকার করে শুধরে নেয়ার দ্বায়িত্বও। আপনার প্রতি আজ আমার কোন অনুরাগ, অভিমান নেই। খেয়ালী মেয়ে মনিকা যাকে একটি দিন না দেখলে দুজনে মনে হতো হাজার বছর কোথাও হারিয়ে গেছি, আমার একটি ভূলের মাশুলের জন্য সেই দিন সাথে তুমুল ঝগড়া করে মনমালিন্য হয়েছি, আজ দুইজনে দুই মেরুর আজ পর্যন্ত দেখা-দেখি হওয়া সুযোগ হয়নি। বুদ্ধ দর্শন গ্রন্থ গুলো আমাকে আজ চোখ খুলে দিয়েছে জেনেছি "শত্রু দ্বারা শত্রু উপসম হয় না, মিত্র দ্বারাই শত্রু উপসম হয়"। যেদিন আমি বুঝতে পেরেছি সেদিন তুমি আমার কাছ থেকে অনেক দূরে বিয়ে করে এক সন্তানের জননী হয়ে বেশ সুখে আছো, তোমার স্বামী কর্মস্থলে সুবাদে এখন নাকি রাজশাহীতে। মনিকা ভাল মেয়ে এবং সুন্দরীও ছিলেন, তাঁর স্বামী সুজন সুদর্শন সুপুরুষ।ভাল উচ্চ বেতনে জব করেন।তাই বলা যায় এক সন্তানের জননী হয়ে সুখী সংসার তোমার এবং মনে প্রাণে কামনা করিও তাই। মনিকা আজ আমার তোমার প্রতি কোন অভিমান নেই,আমি আমার অভিমানের কাছে হেরে গেলাম মনিকা তুমি আমাকে ভূল বুঝ না।
তোমার সুখের সংসার আরো সুখী হোক কামনা করছি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২৬/০১/২০১৯ইং
#######################
অনন্যা চাকমা
ছোটবেলায় প্রেম করার বিষয়টি খুব ভয় পেতাম।অতটা বুঝতাম না। প্রেম না করলেও প্রথম প্রেমের চিঠি পাওয়ার কথা মনে আছে তখন আমি রামগড় সরকারি হাইস্কুলে ক্লাস নাইনে সবে মাত্র উত্তীর্ণ হয়েছি। স্কুলে আসা-যাওয়া পথে অরুন জ্যোতি নামের একটি ছেলে আমাকে অনুসরণ করত। স্কুল থেকে বাড়িতে ফেরার পথে প্রায় সময় ছেলেটি তার বন্ধুদের সঙ্গে মটর সাইকেলে করে আমার বাড়ি পর্যন্ত আসত। যদিওবা আমাকে কিছুই বলতো না। কোন কারণে চোখাচোখি হলো হাঁসি দেওয়া চেষ্টা করতো। ছেলেটি সুদর্শন ভাল পরিবারের সন্তান তাদের বাবা-মা সরকারী চাকরী করে বেশ সুনাম তাদের গ্রামের মানুষেরা তাদের প্রসংশায় পঞ্চমুখ। তাঁর সাথে নামের প্রথম অক্ষরটি মিল আছে বলেই, মাঝে মাঝে আমার বান্ধবীরা আমাকে অরুনী বলে খোঁচা দিতেন। আমার এইসব একদম বেশ পছন্দ নয়, মাঝে মাঝে রেগে যেতাম,একদিন আমার খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী "মনিকা" ছেলেটি একটি কাগজ আমার হাতে ধরিয়ে দিল।খুলে পড়ে দেখলাম করুন জ্যোতি প্রেমের নিবেদন, আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না, আমি ভয়ে অস্থির।স্কুলে পৌঁছা মাত্রই প্রধান শিক্ষকের কাগজটি জমা দিলাম। এই নিয়ে তুমুল কান্ড! সারাদিন স্কুলে কান্না করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত স্কুল থেকে বিষয়টি পরিবারের উভয়কে জানানো হয়েছে।বাবা ছুটির পর স্কুল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসলেন। একদিন পর ছেলেটির মাবাবাসহ আমাদের পরিবারের তাঁর ছেলের জন্য মাফ চাইতে আসলেন। সত্যিই তাদের ছেলেটি মা-বাবা অত্যন্ত বিনয়ী মিষ্টি ভাষি ধর্মীক পরায়ন।তাঁরা আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন, অভয়বাণী দিলেন,ভাল করে লেখাপড়া শিখে জ্ঞানী মানুষ হতে আশীর্বাদ করলেন। এই পর ছেলেটি আমার বাড়ির ধারে কাছেও যাইনি, শুধু মাত্র স্কুলে আসা যাওয়া পথে দেখতাম শিমুল গাছের তলায় বসে উদাসীন হয়ে আকাশে দিকে তাকিয়ে থাকতেন। কোনদিন আমার দিকে চোখ তুলেও থাকায় নি।আজ কোন দিন দেখা হয়নি, আমার থেকে শতশত মাইল দূরে পৃথিবীর শেষ সীমান্তে রানওয়ে ইউনিভার্সিটিতে গভীর লেখা পড়ায় মনোযোগ সহকারে ব্যস্ত হয়ে আছেন। আমি আজ ছোট নয় নয় বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আদিবাসী ছাত্রী। আমার বিবেকবোধ সদাজাগ্রত, আমি আপনাকে অপমান করার জন্য খুবই লজ্জিত, অনুতপ্ত ও দুঃখিত। মানুষ ভূল করে ভূল স্বীকার করে শুধরে নেয়ার দ্বায়িত্বও। আপনার প্রতি আজ আমার কোন অনুরাগ, অভিমান নেই। খেয়ালী মেয়ে মনিকা যাকে একটি দিন না দেখলে দুজনে মনে হতো হাজার বছর কোথাও হারিয়ে গেছি, আমার একটি ভূলের মাশুলের জন্য সেই দিন সাথে তুমুল ঝগড়া করে মনমালিন্য হয়েছি, আজ দুইজনে দুই মেরুর আজ পর্যন্ত দেখা-দেখি হওয়া সুযোগ হয়নি। বুদ্ধ দর্শন গ্রন্থ গুলো আমাকে আজ চোখ খুলে দিয়েছে জেনেছি "শত্রু দ্বারা শত্রু উপসম হয় না, মিত্র দ্বারাই শত্রু উপসম হয়"। যেদিন আমি বুঝতে পেরেছি সেদিন তুমি আমার কাছ থেকে অনেক দূরে বিয়ে করে এক সন্তানের জননী হয়ে বেশ সুখে আছো, তোমার স্বামী কর্মস্থলে সুবাদে এখন নাকি রাজশাহীতে। মনিকা ভাল মেয়ে এবং সুন্দরীও ছিলেন, তাঁর স্বামী সুজন সুদর্শন সুপুরুষ।ভাল উচ্চ বেতনে জব করেন।তাই বলা যায় এক সন্তানের জননী হয়ে সুখী সংসার তোমার এবং মনে প্রাণে কামনা করিও তাই। মনিকা আজ আমার তোমার প্রতি কোন অভিমান নেই,আমি আমার অভিমানের কাছে হেরে গেলাম মনিকা তুমি আমাকে ভূল বুঝ না।
তোমার সুখের সংসার আরো সুখী হোক কামনা করছি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২৬/০১/২০১৯ইং
Post a Comment