Header Ads

বামকে ভোট দিয়ে কী হবে ~ প্রতিভা সরকার

স্পষ্ট কথায় কষ্ট নেই। 

অনেকেই বলছেন, ছি ছি বাঙালী, দেশের সর্বত্র এখন শান্তিতে ভোট হয়, ঘরে আগুন লাগানো, বুথ জ্যাম বা হাঁসুয়া দিয়ে পেট ফাঁসিয়ে দেওয়া কোথায় হয় ? সর্বত্র শান্তিপূর্ণ ভোট হলে পশ্চিমবঙ্গের কপালে এই দুর্ভোগ কেন ? এই প্রশ্নকারীদের অনেকেরই মনে মনে বাসনা একবার বিজেপিকে ভোট দিয়ে দেখি কী হয়। 

একটু ভাবলেই পরিষ্কার হয় যে, যে ফ্যাক্টরটির কারণে অভূতপূর্ব সন্ত্রাস ক'রে পঞ্চায়েত ভোটে ৩৪% আসনে বিরোধীদের প্রার্থী দিতে না দিয়ে শাসকদল নির্বাচনের আগেই দিব্যি জিতে যায় তা হচ্ছে বামশক্তির উপস্থিতি এবং পাছে সে শক্তি ফিরে আসে সেই আতঙ্ক। 
ত্রিপুরাতে বামখতম অভিযানে সাফল্য পেয়েছে দক্ষিণপন্থীরা। তাই চাকুরেদের মাইনের ব্যবস্থা করতে না পারলেও সেখানে তথাকথিত শান্তিতে ভোট হয়। যদিও এবার ত্রিপুরা পশ্চিমে প্রায় ৪৫০টি বুথে সিসি ক্যামেরা অচল করে রাখা হয়েছিল। আর দেদার ছাপ্পা ভোট নির্বাচন কমিশনকেও এতো হতবুদ্ধি করে দিয়েছে যে পুনর্নিবাচনের ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। 

কেরালা শক্ত ঘাঁটি, ফলে পশ্চিমবঙ্গে কোনভাবেই যেন বাম আস্কারা না পায় সেব্যাপারে দাদাদিদি একমত। জন্ম থেকেই আর এস এসের তিন শত্রু - কমিউনিস্ট, মুসলমান এবং দলিত। রীতিমতো মিটিং করে ঠিক হয়েছে বামেদের পিষে মারো। অন্তর্জালে সে লিংক দেদার ঘুরে বেড়াল এই ক'দিন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দয়ালু ব্যবহারেও তা প্রমাণিত। ফলে পশ্চিমবঙ্গে লাগামছাড়া সন্ত্রাস ভবিতব্য। টিয়ারুলরা ভোট দিতে এসে মরুক, প্রার্থীকে নির্বাচনকেন্দ্রের বাইরে ঘিরে ফেলুক সশস্ত্র ভোটসন্ত্রাসীরা, কিন্তু বামের এক ইঞ্চি অগ্রগতিও রুখতে হবে। এতো কান্ডের পরেও যে বামের মনোবল ভাঙে না, শত অত্যাচার সহ্য করেও তার সমর্থকরা কানায় কানায় ভরিয়ে তোলে ব্রিগেডের মাঠ, সেই বামকে রুখতে হবে যে কোন মূল্যে এই হল সোজা হিসেব। এই ব্যাপারে ছোট ফ্যাসিস্ট, বড় ফ্যাসিস্টে কোন মতপার্থক্য নেই।    

অথচ বাম ছাড়া এ দেশের গতি নেই। সেটা ইউপিএ১ এর শাসনকালে ভালভাবেই প্রমাণ হয়েছে। আত্মবিস্মৃত বলে আমরা ভুলে যাই, আমাদের ভুলিয়ে দেবার প্রাণপণ চেষ্টাও চলে। যত জনকল্যানকর প্রোগ্রামের ক্রেডিট নেবার জন্য দাদা এবং দিদিরা এখনও দৌড়োদৌড়ি করে, তার বেশিরভাগই ২০০৪-২০০৯ এই সময়সীমায় রূপায়িত হয়েছে। এবং তার সবগুলোই হয়েছে পার্লামেন্টে বামের জোরদার উপস্থিতির কারণে। নাহলে মুক্তবাজারী আর উদারীকরণের দিকে ঝুঁকে পড়া কংগ্রেস সরকারের কোন নৈতিক দায় ছিল না সারা দেশ জুড়ে কৃষকের ঋণ মকুব করার, ১০০দিনের কাজ চালু করা, শিক্ষার অধিকার, অরণ্যের অধিকার এবং তথ্যের অধিকার চালু করা। এই অধিকারভিত্তিক আইনগুলি বাস্তবায়নে সরকার বাধ্য বলেই এখন প্রাণপণ চেষ্টা চলছে সেগুলিকে পালটে দেবার, নিদেনপক্ষে লঘু করার। ২০০৪ থেকে ২০০৯ একটিও বেসরকারীকরণের ঘটনা ঘটেনি। যেই বাম সরে দাঁড়ালো আবার বেসরকারিকরণের মরশুম শুরু হল। 

ঘৃণার রাজনীতিতে ছুপা রুস্তম সব রাজনৈতিক দল। পয়লা বৈশাখী আম মিষ্টি কুর্তা সে কথাই বলে। ব্যতিক্রম শুধু বাম। দলবদলের ঘোড়া কেনাবেচায় যত মুখ দেখা যায় তার মধ্যে সবচেয়ে কম চোখে পড়ে বাম সাংসদ বা বিধায়কের মুখ। 

তবু প্রশ্ন ওঠে বামকে ভোট দিয়ে কী হবে ! মানুষের মতো বাঁচতে চাই, চূড়ান্ত বেকারির হতাশা থেকে সন্তানকে বাঁচাতে চাই, দেশের বিক্রি হয়ে যাওয়া আটকাতে চাই, কৃষকের আত্মহত্যা বন্ধ করতে চাই, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি চাই, সম কাজে সম বেতন চাই, নারীর সমানাধিকার চাই, সাম্প্রদায়িক বিভেদের রাজনীতির বিলোপ চাই,সমস্ত প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক চাই। এতো চাই-য়ের লম্বা লিস্টি নিয়ে বামশক্তি ছাড়া আর কার কাছে যাওয়া যেতে পারে ? 

আছে নাকি আপনার কাছে আর কোন ঠিকানা

No comments