ফেসবুকের বাংলাদেশ || রাগিব নিযাম জিসান

বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানীদের বোধহয় নতুন করে তাদের বইসমূহ সংশোধন করার সময় এসে গেছে। কারণ এখন সমাজ বলতে যা বোঝায় তার সকল সামাজিকতা ফেসবুকই নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রাকৃতিক চাহিদা বাদে বাকি সব কিছুই যে ফেসবুকের মাধ্যমে হচ্ছে তা বলার অপেক্ষার রাখে না।

নানান কিসিমের মানুষ যে এইখানে গিজ গিজ করে তা না দেখলে বোঝা অসম্ভব। এক দল লোক আছে যারা নাওয়া খাওয়া ভুলে add me add me বলে সারাক্ষণ হই হই করে। কি কারণে তারা এমন করে সেটার অনুসন্ধান করতে গিয়ে বন্ধু তালিকার কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির সাথে কথা হয় আমার।

জানা যায় ২০১৩ সাথে বাংলাদেশে ফেসবুক কমিউনিটিতে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বেড়ে যায়। বিভিন্ন ধরণের লেখক যারা ইতিমধ্যেই নিজেদের বই বের করেছেন, পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন তাদের প্রোফাইলে হুড়হুড় করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের ঢল নামে।

তাঁরা একটি স্ট্যাটাস দিলে লাইকের বন্যা বয়ে যায়। এটা দেখে অল্পশিক্ষিত কিছু ব্যক্তি নিজেদের মনে এক ধরণের চেতনা দাঁড় করায়। একে add me চেতনা বলে। এই চেতনাধারীদের বই কেনার পয়সা না থাকলেও মোবাইলে মেগাবাইট কেনার পয়সা থাকে। অতঃপর নিজেদের সাথে মিলে এমন কিসিমের মানুষজনকে তাঁরা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেয়। যার ফলশ্রুতিতে তাদের মধ্যে এক ধরণের অদৃশ্য চুক্তি হয়ে যায়। ফলে চোখ বন্ধ করে মিউচুয়ালি লাইক পড়তে থাকে তাদের স্ট্যাটাসে। স্ট্যাটাসগুলি হয় হোটেল ওয়েটারের কাছ থেকে ধার করে আনা কিছু শব্দ- “Good Morning”, “Good Night”.

আরেক দলকে দেখা যায় চেরবা মার্কা গাল নিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে দিতে। তা ফটো যে রকমই হোক না কেন তাতে তাদের কিছুই যায় আসে না। শুধু লাইকের বন্যা হলেই হলো। অতঃপর তাঁরা সফটওয়্যার বটের সাহায্য নিয়ে ১০,০০০ - ১,০০,০০০ লাইকের মালিক হয়ে যায়। একবার এক বান্দার প্রোফাইল পিকচারে ঢুকেই আমার অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। লাইকের সংখ্যা ২৫,০০০ অথচ তার চেহারা দেখলে আপনি হরর ফিল্মের পোস্টার বেমালুম ভুলে যাবেন!